বিএনপির সভার তথ্যগুলো ফাঁস হয় কেন?
নিউইয়র্ক প্রতিনিধি;
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে করা ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের সব আলোচনা, সিদ্ধান্ত, কর্মপরিকল্পনা কোন না কোন ভাবে আগেই প্রকাশ হয়ে যেত। নির্বাচনের আগে পরের কোন কর্মসুচির রোডম্যাপই গোপন থাকেনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ৫৪ দল জোটের বৈঠকেরও কোন কিছু গোপন থাকছে না। বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু, সিদ্ধান্তসমূহ মূহূর্তেই প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি অভিযোগ আছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা ও সিদ্ধান্তও গোপন থাকছে না। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- এসব তথ্য প্রকাশে বিএনপির মধ্যে কোনো গুপ্তচর রয়েছে কি না, তা খোঁজা হচ্ছে।
সরকারকে হটাতে আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ তৈরি করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এতে রয়েছে গণমিছিল, সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন। ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাধা এলে হরতাল-অবরোধেরও চিন্তা রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা এবং নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হচ্ছে। এখন বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ দলগুলো নিয়ে প্রতিদিনই বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু সরকারকে হটাতে বিএনপির আলোচনা ও পরিকল্পনা কিছুই গোপন থাকছে না। আগেই সরকারের ঘরে সব তথ্য চলে যাচ্ছে। এতে করে বিএনপির উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা সবকিছুই ভেস্তে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সব দলেরই কিছু গোপনীয়তা থাকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে কী সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তারা কী করছে, কী করতে চাচ্ছে-তা সবকিছুই অজানা থাকে। কিন্তু বিএনপি কী করছে, কী করবে-কোনো কিছুই গোপন নেই। সবকিছু আগেই প্রকাশ হয়ে যায়। এতে করে বিএনপিকে দমন ও নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পথ খুঁজে বের করা ক্ষমতাসীন দলের জন্য সহজ হয়ে যাচ্ছে। বিএনপির যদি মানুষের জন্য কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা থাকে, তাহলে সেগুলোর ক্ষেত্রে এখন থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে বিএনপির ভেতরে নিজস্ব যত গোপনীয় সিদ্ধান্ত ছিল, তার কোন কিছুই গোপন থাকেনি। তা সরকার মহলে হুবহু চলে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নীতিনির্ধারণী শীর্ষ দুই নেতা এ বিষয়ে বলেন, ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে আমাদের কিছু বিশেষ পরিকল্পনা ছিল, বিশেষ নোট ছিল। অবাক করা বিষয়! সেগুলো সাধারণ মানুষেরও হাতে হাতে চলে এসেছে। ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের আগে ১০ দফা ঘোষণার ড্রাফট জানত শুধু স্থায়ী কমিটি ও জোটের প্রভাবশালী কিছু নেতা, কিন্তু তার তিন-চার দিন আগেই হুবহু ড্রাফট মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যায় এবং রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা ঘোষণার পাঁচ-ছয় দিন আগেই হুবহু গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়ে যায়। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েক দিনের মধ্যে একটা কর্মসূচি ঘোষণা হবে এবং এসএসসি পরীক্ষা ও কোরবানির ঈদের পর বড় ধরনের কর্মসূচির খসড়া তৈরি হয়েছে। বিস্ময়করভাবে সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। অনেকে ধারণা করছেন, বিএনপির ভেতরে তথ্য ফাঁসে নাটের গুরু রয়েছে। আবার কেউ সরকারের এজেন্ট হয়েও কাজ করছে।
তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা দাবি করছেন, বিএনপির ভেতর থেকে কোনো তথ্য ফাঁস হচ্ছে না। সরকার আতঙ্কিত হয়ে অবৈধভাবে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এতে করে অনেক কিছুই সরকার টের পেয়ে যাচ্ছে। তাদের শঙ্কা, যদি আগাম সব তথ্যই এভাবে প্রকাশ হতে থাকে, তাহলে কখনোই বিএনপি উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সফল হবে না। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল এগিয়ে আনার গুঞ্জন রয়েছে। যদি সরকারের এমন সিদ্ধান্ত থাকে, তাহলে সেটি মাথায় নিয়ে আন্দোলন পরিকল্পনায় বিএনপিকে আরও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক বলেন, বাংলাদেশে তথ্য পাচার অনেক বড় বিষয়। বাংলাদেশে আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে একটা ধোঁয়াশা রয়েছে। কোনো কিছুই বলেকয়ে হয় না। বিএনপি আন্দোলন করছে দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য। একটা সংগ্রাম করতে একটা দলের সঙ্গে কিছু দল মিলে জোট তৈরি হয়, তেমনি বিএনপিতেও হয়েছে। তাদের নিয়ে অনেক বৈঠক হয়, আলোচনা হয়। কিছু কথা প্রকাশ হতে পারে। তবে সব কথাই যে সত্য, তা নয়। তবে এটি ঠিক, বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফাঁস হয় না। সরকার মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় জানতে অবৈধভাবে অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সরকার সব সময় দৃষ্টি দিয়ে থাকে বিরোধী দল কী করছে। এখন তো দেশের গণমাধ্যমগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সরকার কিছু জানতে পারলে আগেই প্রকাশ করে দেয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এই সরকার তো সবকিছুই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এ দেশের মানুষের এখন কোনো ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও নেই। বিরোধী রাজনৈতিক দল কী করে, কী করতে চায়, সেগুলোও নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। সরকার বিভিন্ন প্রযুক্তি দিয়ে আড়ি পেতে গোপনীয় বিষয়গুলো প্রকাশ করছে।